04-December,2022 - Sunday
Upcoming Project 1
ভোঁ-কাট্টা ঘুড়িটি ও একটি লড়াই
শুক্লা রায়
======================
যাওয়া উচিৎ হবে কি হবে না ভাবতে ভাবতেই পত্রিকা অফিসের দিকে পা বাড়ায় সুমনা। মনে মনে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয়, কি আর হবে, ঝগড়া করলে বড়জোর হুমকি দেবে ওর লেখা আর কোনোদিন ছাপবে না। তাতে আর এমন কি ক্ষতি-বৃদ্ধি! সে তো এমনিই তার লেখা কোথাও ছাপা হয় না কখনও। তবু এবার ও একটা মোলাকাত করেই ফেলবে। অনেক জায়গাতেই ও নিয়মিত লেখা পাঠায়। সবই লিটল ম্যাগাজিন। আজ যেখানে যাচ্ছে সেটা অবশ্য একটা বানিজ্যিক পত্রিকা অফিস। অফিসটা যেহেতু ওর শহরেই, আর স্পষ্ট ঠিকানা দেওয়া আছে তখন গিয়েই দেখা যাক একবার।
দরজায় দাঁড়িয়ে সসংকোচে জানতে চাইল, আসব? গলাটা টেস্ট করে নেওয়া হয়নি, 'আ' টা ঠিকমতো বের হল না যেন। তবু কেউ মুখ তুলে চাইল। কম্পিউটার স্ক্রীন থেকে চোখ তুলে একটি ছেলে জিজ্ঞাসু নেত্রে ওর দিকে তাকিয়ে যেন পাল্টা প্রশ্ন করছে, সেই টোনেই বলল 'আসুন'। সুমনা সরাসরি ছেলেটার কাছে গেল। সুমনা, সুমনা সান্যাল। দেখল পাশে চায়ের স্টল। বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ মিলিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। ধূমায়িত চা আর সিগারেটে ঘোর ঘোর ঘরটি বেশ আমোদিত, সুরভিত। সেদিকে তাকিয়ে নিজেকে খুব বিবর্ণ আর বেমানান লাগল অকারণে। তখনি বুকের ভেতর জেদি মেয়েটা ওকে ঠেলে সামনে এগিয়ে দিল। ছেলেটার কাছে গিয়ে আস্তে কিন্তু আত্মবিশ্বাসী গলায় বলল, 'এই পত্রিকার সম্পাদকের সাথে একটু কথা বলতে চাই।' ছেলেটা যেন অবাক হয়ে গেল। নাম-গোত্রহীন কে না কে, সরাসরি সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করবে! অদ্ভুত তো! চোখে-মুখে বিষ্ময়ের ভাব না মুছেই বলল, 'কি দরকার আমাকে বলুন'। সুমনা বিনীতভাবে বলল, আমি অনেকবার লেখা পাঠিয়েছি, কোনো লেখাই মনোনীত হয়নি, সে ব্যপারে একটু কথা বলতাম। ছেলেটার মুখে এতক্ষণে হাসি ফুটল। সে হাসি অবশ্যই তাচ্ছিল্যের। এমন আন-ইম্প্রেসিভ একটা চেহারা, তার আবার লেখা! সে যে কী, বোঝাই যাচ্ছে। তবু মেয়েটাকে কয়েক সেকেন্ড সোজা তাকিয়ে দেখার ভণিতাটুকু করতে ভুলল না। সস্তার কুর্তি আর কাঁধের ম্যাড়মেড়ে ব্যাগে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। লেখাপড়া কদ্দুর কে জানে! আজকাল সবাই লেখক, সবাই লেখিকা। পৃথিবীতে আর যেন কোনো কাজ পড়ে নেই! তবু বলেছে যখন উত্তর তো একটা দিতেই হয়! গলাটাকে খাদেই ধরে রেখে তার উপর যথা সম্ভব গাম্ভীর্যের আস্তর মিশিয়ে ছেলেটি এবার বলল, 'খুব ভালো মানের লেখা না হলে আমরা ছাপি না ম্যাডাম' ! 'ম্যাডাম' শব্দটায় প্রচ্ছন্ন বিদ্রুপ স্পষ্ট। সুমনা বুঝল। বুঝেও ঝট করে দমে গেল না। তবে ও আর মুখে কিছু বলল না। ওদের এ মাসের পত্রিকার একটা কপি বের করে প্রথমে টেবিলে রাখল। তারপর সূচিপত্র খুলে ছেলেটাকে সরাসরি প্রশ্ন করল, 'এই যে এ মাসে আপনারা গল্প ছেপেছেন কারুবাকী মিত্র, শ্রীময়ী সেন আর স্পন্দন ভৌমিকের। বাকি দুজনের লেখা নিয়ে কিছু বলার না থাকলেও শ্রীময়ী সেনের লেখাটা কি খুব উচ্চমানের'? বলার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপারটা ঠিক কি হল সুমনা বুঝল না, দেখল উত্তেজিত আড্ডাদানকারীদের মাঝখানে ও ঘেরাও হয়ে গেল। একজন সুন্দর মতো মহিলা, বেশ অভিজাত দেখতে, ওর দিকে তাকিয়ে রাগে চিৎকার করে বলল, 'তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে অপমান করার।' সুমনা আশ্চর্য হয়, 'আমি আবার কখন আপনাকে অপমান করলাম'? মহিলা ততোধিক উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। চিৎকার করতে লাগলেন, 'আমার লেখা নিয়ে যা তা বলার সাহস হয় কি করে তোর?' সুমনা বুঝল এবং সঙ্গে সঙ্গেই দুঃখিত বলে মাপ চেয়ে নিল। কিন্তু ততক্ষণে অবস্থা আর আয়ত্বে নেই। মহিলা চিৎকার করেই চলেছেন। হতভম্ব সুমনা কি করবে ভেবে পেল না। অন্যেরা তাকে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলেন বটে, কিন্তু সে দূর অস্ত। থামবে বলে মনে হচ্ছে না। তার মধ্যে ও ন যযৌ ন তস্থৌ হয়ে অসহায় ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকল।
এমন সময় জলদগম্ভীর কন্ঠে, 'কি হয়েছে অভিজ্ঞান?' সুমনা দেখল এই ঘরটার ভেতরদিকে বেশ সাজানো-গোছানো আর একটি ঘর। ওখান থেকেই কথাগুলো ভেসে এল। আওয়াজ লক্ষ্য করে তাকাতেই ঝিনেদার জমিদার মিষ্টার কালাচাঁদ রায়রার সাথে দেখা হয়ে গেল। অভিজ্ঞান মানে সেই ছেলেটা খুব সংক্ষেপে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে, সুমনার প্রতি তার রাগটাকে লুকানোর কোনো প্রয়োজনই মনে করল না অবশ্য। ঝিনেদার জমিদার কালাচাঁদ রায়রার নামটা জানা গেল, রঙ্গনদা। বেশ ভালো নাম। সুমনা লক্ষ্য করল সবারই খুব সুন্দর সুন্দর নাম। ভদ্রলোক এবার ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, বসুন। এত কান্ডের পর সুমনাকে বসতে বলার কথা কারো মাথায় এল তাহলে? তারপর বললেন,
"আপনার কোনো লেখা সঙ্গে আছে? এনেছেন?"
অবাক হলেও এবার একটু কুন্ঠার সঙ্গেই সুমনা বলল,
"আমি তো সব ফোনেই লিখি। এখানেই আছে" - বলে সস্তার চাইনিজ সেটটা দেখাল।
"একটা বের করে দিন তো, একটু দেখি।"
সুমনা লক্ষ্য করল লেখাটা পড়তে পড়তে লোকটির মুখের রেখাগুলো যেন পাল্টে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ওকে ফোনটা ফেরৎ দিতে দিতে বললেন,
"কোনো কারণে আপনার লেখা আমরা মিস করেছি। লেখা তো মেলেই পাঠিয়েছেন? আপনার মেইল আই ডি টা বলুন আমি সব লেখা দেখে নেব। আর" - বলে একটু থামলেন। তারপর বললেন, "আপনার সব লেখাই আমরা ছাপতে পারব বলে আশা করছি। কাইন্ডলি একটু ফোন নাম্বারটা রেখে যান।"
অফিসটা থেকে বেরোতে বেরোতেই সুমনার অদ্ভুত আনন্দ হল। বুকের ধুকপুকুনিটা এখন না লুকোলেও চলে! এই খুশিতে আসলে ও কি করবে ভেবে পেল না। সত্যিই ওর লেখা বের হচ্ছে তাহলে? সুমনা সান্যালের লেখা! এত দিনের স্বপ্ন! শুধু কী স্বপ্ন! একটা অলিখিত যুদ্ধও বটে। আনন্দে বাড়ির পথই ধরবে ভাবল। একজায়গায় পড়াতে যাওয়ার কথা ছিল, আর যাবে না। কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঝেঁপে বৃষ্টি নামল। অগত্যা বৃষ্টি কমার অপেক্ষায় নিচতলাটার বারান্দাতেই দাঁড়াল এসে। পাশে সারি সারি দোকান। অনেকটা সময় ওকে এক জায়গায় আটকে থাকতে দেখে আশেপাশে বেশ একটা চাঞ্চল্য দেখা গেল। কারো গান পেল, কারো সিনেমার ডায়লগ, নাচ, নিজের ডায়লগ, এসব আর কী। সুমনারও এ সব গা সওয়া। ও চুপচাপ, স্থির। এরমধ্যে একজন এসে বেশ একটু ভাব জমানোর চেষ্টাও করল। সুমনা নির্বিকার। টোটো নিয়ে যাওয়াই যেত, কিন্তু পুরো পথটা টৌটোতে গেলে ভাড়া বেশি পড়বে। সেজন্য কিছুটা হেঁটে, কিছুটা পথ টোটো করে ফিরবে। সন্ধ্যায় আর একটা পড়ানো আছে। ও নির্বিকার চোখমুখ করে কিছুটা উদাসীন ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে থাকল। এসবে লজ্জিত, সংকুচিত হয়ে লাভ নেই। লজ্জা আসলে সে পাবে কেন? অবশ্য একসময় ওরও খারাপ লাগত। কিছুটা ভয়ও পেত। কিন্তু এখন এসব গা সওয়া। বাড়িতেও। পাড়ার সবগুলো চোখ এখন সুমনার প্রতি ভীষণ সহানুভূতিশীল। আহারে! মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে না। কে বিয়ে করবে? ওই তো চেহারা! হাড় জিরজিরে, কাঠি কাঠি হাত পা। বাপ পড়া বিছানায়। মেয়েটাই সংসারটা টানছে, বাপের ওষুধ, পেটের ভাত, নিজের শখের জিনিস পত্র। অবশ্য ওর কিছু শখ টখ আছে বলে কেউ কোনো কস্মিনকালেও জানে না। তা এ হেন মেয়ে ঈর্ষার নয়, দয়ার পাত্র। ছাত্র পড়িয়ে আর কয় টাকা উপার্জন? তবু সুমনা নামের মেয়েটি আসলে একটি মানুষ। আস্ত মানুষ। শুধু মানুষ বললে কম বলা হয়, একজন অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ। তার খবর আর কে রাখে? সবাই তার পরিশ্রমী, ভাবলেশহীন মুখটাই দেখে উপর উপর।
তার নাম এখন আর মনে নেই। সত্যিই কি মনে নেই? কে জানে! কলেজের দিনগুলোয় 'সে' নামের এক সঙ্গী ছিল তার। ক্লাশ কেটে কাটা ঘুড়ির মতো দুটোতে জড়িয়ে মড়িয়ে গোত্তা খেতে খেতে সারা শহর তোলপাড় করার একটা হিস্ট্রি ছিল।
দুজনেই লিখত। পরস্পরের কাছে নিজেদের লেখা পড়ত, শুনত। সময় কাটানোর বিস্তীর্ণ সময় পেরিয়ে যেত কবিতায়, গল্প পাঠে। 'সে' এখনও লেখে। সব লিটল ম্যাগাজিনেই তার লেখা পড়ে সুমনা। একটু মেদ জমেছে চিবুকের ভাঁজে, চোখের কোণে আর অনেকটা পকেটের মানিব্যাগে। সে অনেকদিন আগের কথা। কবেই মুছে গেছে সব ইতিহাস। চুকেবুকে গেছে সব স্বপ্নের হিসেব। সে ঘুড়ি এখন ভো-কাট্টা। তবু সুমনার বাড়ি ফেরাটায় অনিবার্যভাবে এখনও 'সে' ই সঙ্গী হয়ে ওঠে। টোটোর চাকার গতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিও মধ্যম লয়ে তার রূপ পাল্টাতে থাকে। বৃষ্টি মুছে ধীরে ধীরে আকাশ ফুটে উঠেছে আশেপাশের জমা জলে। মন ভালো করা ছবি। এমন ভালো দৃশ্য দেখলে এখনও মনকেমনের বাঁশিটা ধুলো থেকে জেগে ওঠে যেন। 'সে' নামের অস্তিত্বটির মিথ্যে হয়ে যাওয়া মনে পড়ে যায় হঠাৎই, এখনও।
বেসনে কয়েকটা পেঁয়াজ কেটে বড়া করেছে মা। মহিলা খুব চাপা স্বভাবের। মেয়েকে যত্ন করে থালা সাজিয়ে দিয়ে নিজে একটু পরে বসেন। সবার আগে সুমনার বাবাকে খাইয়ে দেন। তারপর খেতে খেতে গল্প করেন। পাড়ার সব মানুষের ঘরের খবর এই সময় পেয়ে যায় সুমনা, মায় মেনী বেড়াল থেকে ভুটু, কালু সবার গল্পই হাসিমুখে করে যান। তিনি কোনো মনখারাপের কথা বলতে জানেন না আসলে। সুমনাও জানে সেটা। ওর হাসিতে ধরা থাকে মায়ের প্রতি আগ্রহ ও প্রশ্রয়। অথচ দুজনেই জানে মাঝের সত্যটা কি নির্মম। কল পাড়ে জল আনতে গিয়ে মা কে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা ও উপর পড়া উপদেশ হজম করতে হয় নিশ্চয়ই। মা সেটা কখনও সুমনাকে বলে না। ছাত্র পড়িয়ে ক্লান্ত মেয়ে ঘরে ফিরলে তিনি শুধু তার ক্লান্ত চোখে যতটা সম্ভব আনন্দের ছবিই আঁকেন। এই অভিনয়টুকু সুমনাও জানে। তবু এটুকুর প্রতি ওরও লোভ বড্ড বেশি।
যেন ভুলে যাওয়াটাই জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। তবু এই ছাত্র পড়ানো আর টুকিটাকি বাজার শেষে ঘরে ফেরা, এর বাইরে আর কোনো কাজ নেই বলেই হয়ত সব ভুলে যাবার কোনো উপায় নেই। শাক-সব্জি, মাছ, কখনও সখনও একটু মাংসের বাজারটা বরাবর মা করে। সেই বাবার শয্যাশায়ী হওয়ার পর থেকেই। তাই পড়ানোর ফাঁকে অনেকটাই সময় হাতে পেয়ে যায় নিজের হৃদপিন্ডটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করার। কিন্তু করতে চায় না। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডই তো আপেক্ষিক। সেখানে সুমনা কোথাকার কে! তাই যতটা সম্ভব নিজের প্রতি নৈর্ব্যক্তিক থাকার চেষ্টা করে।
রাতে আবার ঝেঁপে বৃষ্টি নামল। এরকমই এক বৃষ্টির দিনে আসলে তার যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল। হতভম্ব সুমনা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছিল। সেও আর কখনও ডাকেনি, সুমনাও যায়নি। তারপর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সব ধরণের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকেই সুমনাকে যত্নে মুছে ফেলেছে সে। প্রথম প্রথম সে এক ভয়ঙ্কর কষ্ট। সময় সবটা মুছতে পারেনি, তবে তীব্রতাটা কমিয়েছে। জ্বালা বাড়িয়েছে বেশি। লেখা ছাপানোর জেদের সেই শুরু। আজ তার সাফল্যের প্রথম ধাপ। একবার পা ফেলতে পারলেই ধীরে ধীরে শেকড় ছড়াবে। এই ক'বছরে সুমনা অনেক পড়াশুনা করে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।
সেদিনও ঠিক এমন বৃষ্টিমুখর একটি দিন ছিল। 'সে' তার নিজের লেখা গল্প পড়ছিল। সুমনার বেশ নড়বড়ে আর কাঁচা লেগেছিল লেখাটা, অনেকটাই যেন পুরনো ধাঁচের। আধুনিক, ঝরঝরে নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই সুমনা লেখাটির সমালোচনা করেছিল। কারণ ওর পড়ার পরিধি তখনও বিরাট ছিল। ভেবেছিল ভুলটা ধরিয়ে দিলে ও নিজেকে আরো বেশি পরিণত করবে। কিন্তু বাস্তবে হল হিতে বিপরীত। সেদিনের তার রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে যাওয়া, অপমানিত চেহারাটা মনে পড়লে সুমনা এখনও অবাক হয়। অবাক হয়ে ভাবে যে কোনটা অপমান? লোকে আমার খারাপ লেখাটাকেও প্রশংসা করছে ভেবে গর্বিত হওয়া নাকি সত্যিকার প্রিয়জনের কাছে সমালোচনা শোনা? লেখার মানের কোনো উন্নতি না হলেও কিন্তু সুমনার 'সে' এখন নিয়মিত অনেক পত্রিকায় লিখছে এবং নিজেও একটি পত্রিকা সম্পাদনা করছে। আসলে বিষয় এটাই। সুমনা ভাবে। আমি পত্রিকা সম্পাদক, আমার খাতির একটু তো ভাই করতেই হবে। একদম নতুন মুখের লেখা সত্যিই কি কোনো সম্পাদক ছাপেন? কি জানি! সুমনার অন্তত জানা নেই। সবার দরজায় একবার করে ঘোরা হয়ে গেছে ওর। ওর আর একটা যেটা বদগুণ সেটা হল এমনিতে খুব মিশুকে হলেও কারো সঙ্গে মানে সেই কেউটা যদি বিখ্যাত বা বেশ একটু 'নাম আছে', 'নাম আছে' টাইপের হন তাহলে ও মোটেও আগ বাড়িয়ে ভাব জমাতে পারে না। ওর ধারণা, ওর লেখাই কথা বলবে। কিন্তু সে এখনো হয়ে ওঠেনি। আদৌ হবে বলেও মনে হয় না। কেননা আজ অবধি এরকম কোনো সম্পাদকের সঙ্গে ওর সাক্ষাৎ হয়ে ওঠেনি, যিনি পরিচয় নয়, নিজের পত্রিকার জন্য ভালো লেখা খুঁজছেন। সেজন্যই কতকটা জোর করেই এই পত্রিকা অফিসে প্রবেশ। এটা ওর প্রাথমিক সাফল্য কিন্তু শেষ সাফল্য নয়। পায়ের তলায় জমি তৈরি করার লড়াইয়ের সবে শুরু নাম-গোত্রহীন এক লেখিকার। এই মুহূর্তে এই তল্লাটের মাথার উপর বসে আছে তার 'সে', যে কিনা এখন একটি পত্রিকা সম্পাদক, অনেক সম্পাদকের ভাই, বন্ধু, দাদা। সুমনা তাই জানে, ওর লড়াইটার শুরু আছে, শেষ নেই।