04-December,2022 - Sunday
Upcoming Project 2
দর্পণ
রাজর্ষি দত্ত
========
একটা ছোট্ট জিনিসের জন্য ভাড়ী বিপত্তি !
বীমা কোম্পানির মিটিং উপলক্ষ্যে এসেছি দিনাজপুরের এই মফস্বল শহরে । গত রাত কাটিয়েছি স্কুলের এক ব্যাচেলার বন্ধুর বাড়িতে । আজ সকালে দাঁড়ি কামিয়ে, নাস্তা সেরে, মিটিং শেষ করে অন্য সবার সাথে বাড়ি ফিরে যাবার প্রোগ্রাম । সঙ্গে আনা শেভিং ক্রিম, ব্রাশ, রেজার সব নিজস্ব। কিন্তু এই বাড়িতে একটাও আয়না নেই !
“ওই জিনিস আমি রাখিনা অনেকদিন” - সাফ জবাব এক জীবনে বহু উনুনের আঁচ ও ধোঁয়া খেয়ে আসা আমার বিচিত্র বন্ধুর । “তোর দরকার নেই ?” বলতে গিয়েও থেমে গেলাম কারণ ওর মুখভরতি দাঁড়ি গোঁফের জঞ্জাল । শুনলাম যে দুমাসে একবার কোন দয়ালু ইটালিয়ান সেলুনের নাপিত এসে ওর কার্যসিদ্ধি করে যায় । “কিন্তু কেন ?” তবুও ক্ষুদ্র প্রশ্নটার সাথে মানানসই হাসিটাকে আটকানো গেল না ।
“আয়না খুব গোলমেলে জিনিস বুঝলি? সবকিছু বদলায় - সময়, দুনিয়া, স্বভাব, ভাবনা, সম্পর্ক…কিন্তু আয়না বদলায় না। তোরা রোজ নিজের প্রতিবিম্বটা দেখিস বলে অন্য বদলগুলি চোখে পরে না। একটা বড় সত্যিকে এড়িয়ে যাস । আমার অতীতের আমি আর আজকের এই আমি কি এক ? সে কি শুধু চেহারার বদলে ? যে কাঁচে এফোঁড় ওফোঁড় দেখা যায় তার পেছনে সিলভার কোট লাগিয়ে আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে…”
দাঁড়ি কাটা মুলতুবি রেখে আমি ততক্ষণে পালিয়েছি চানের ঘরে । আর সময় নেই !
মিটিং-এ অজস্র কথার ফুলঝুরি আর স্বপ্নকে বাস্তব করার অতি সরল পদ্ধতির গুণগান করে, টার্গেট পূরণের দেরগোরায় পৌঁছে, উপরওয়ালাদের বাহবা কুড়িয়ে ক্লান্ত অভিনেতার মত বাড়ি ফিরছি অফিসের গাড়িতে । এমনি সময় নজর পড়লো লুকিং গ্লাসে ।
নিজের চোখে নিজের মুখটি দেখলাম। এক লমহার জন্যই বোধহয় !
তারপরেই চোখদুটি নেমে এল নিচে।